২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইরাক আক্রমণ করে এবং বাগদাদ দখল করে নেয়, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন সাদ্দাম হোসেন হয়ত নিহত হয়েছেন বা পালিয়ে গেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। দীর্ঘ ৮ মাস পর, ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাদ্দাম হোসেনকে ধরা হয় এক গোপন বাঙ্কারে—ভূগর্ভস্থ এক ছোট গর্তে, যাকে বলা হচ্ছিল ‘স্পাইডার হোল’। প্রশ্ন জাগে—এই দীর্ঘ সময় তিনি কীভাবে পালিয়ে ছিলেন এবং টিকে ছিলেন?
১. গোপন আশ্রয়স্থল: “স্পাইডার হোল”
টিকরিত শহরের কাছে, তাঁর নিজ এলাকা আদ-দৌরিতে পাওয়া যায় এই আশ্রয়স্থল। এটি ছিল মাত্র ৬ থেকে ৮ ফুট গভীর এক সরু গর্ত, যেখানে প্রবেশ ও প্রস্থান করা যেত কেবল একটি কাঠের ঢাকনা খুলে। আশ্রয়টি ছিল আশেপাশের খেজুর গাছের বাগানের মধ্যে, যা বাইরে থেকে নজরে আসত না।
২. স্থানীয় সমর্থন ও সহায়তা
সাদ্দাম হোসেনের আশেপাশে ছিলেন তাঁর কিছু বিশ্বস্ত সমর্থক এবং আত্মীয়, যারা নিয়মিত খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন। ধারণা করা হয়, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁরা বারবার অবস্থান পরিবর্তন করতেন।
৩. জীবনযাপন ছিল কঠিন
যদিও বাইরে থেকে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাচ্ছিল, তবু জীবন ছিল নিঃসঙ্গ, অস্বস্তিকর ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর। এক ঘরে দিনের পর দিন কাটানো, বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ধরা পড়ার আতঙ্ক—সব মিলিয়ে সাদ্দামের এই ৮ মাস ছিল চূড়ান্ত পরীক্ষা।
৪. ধরা পড়ার সময়ের চিত্র
ডেল্টা ফোর্স এবং ৪র্থ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের একটি যৌথ অভিযানে সাদ্দাম হোসেনকে ধরা হয়। তাঁর অবস্থা ছিল তখন অত্যন্ত অবিন্যস্ত—দাড়ি-চুলে ধুলো-মাটি, তাঁর হাতে ছিল পিস্তল, কিন্তু কোন প্রতিরোধ করেননি।
৫. তাঁর পতনের প্রতীক
সাদ্দাম হোসেনের এমন গর্তে লুকিয়ে থাকার খবর এবং ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ছিল তাঁর শাসনের এক বিপরীত প্রতিচ্ছবি—যেখানে এক সময় তিনি ছিলেন প্রাসাদে বাস করা এক শক্তিমান নেতা, আর পরিণতিতে গর্তে লুকিয়ে জীবনযাপন।
উপসংহার
সাদ্দাম হোসেনের আট মাসের গোপন জীবন ছিল এক ঐতিহাসিক অধ্যায়—যেটি একজন স্বৈরশাসকের পতনের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে। এই ঘটনা শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নয়, বরং পুরো ইরাকের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
Add comment