দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংস, মৃত্যু আর অমানবিকতার এক নির্মম চিত্র। এই যুদ্ধের পেছনে যিনি মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার নাম আডলফ হিটলার (Adolf Hitler)—জার্মানির একনায়ক, যিনি শুধু একটি যুদ্ধই শুরু করেননি, বরং পরিকল্পিতভাবে নির্মূল করে দেন প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি মানুষকে

এই ঘটনা ইতিহাসে “হলোকাস্ট (Holocaust)” নামে পরিচিত।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—কেন হিটলার এতটা ঘৃণা করতেন ইহুদিদের?
কী এমন ঘটেছিল, যা তাকে পরিণত করেছিল মানবতার এক ভয়ংকর শত্রুতে?

হিটলারের শৈশব ও মানসিক গঠন

আডলফ হিটলার জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়ায়। ছোটবেলায় মা-বাবার সাথে কঠোর আচরণ, স্কুলে ব্যর্থতা, এবং জীবনে হতাশা—এইসব মিলিয়ে তার মধ্যে গড়ে উঠেছিল এক বিষাক্ত মানসিকতা।

তরুণ বয়সে ভিয়েনায় থাকার সময় হিটলার ইহুদি ব্যবসায়ীদের সফলতা দেখে হিংসা অনুভব করতেন। পাশাপাশি সমাজে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভুল ধারণাও তাকে প্রভাবিত করে—যেখানে ইহুদিদের দোষারোপ করা হতো জার্মানির আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার জন্য।

হিটলারের রাজনৈতিক উত্থান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর দেশের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা চরমে পৌঁছায়। সেই সুযোগে হিটলার গড়ে তোলেন নাৎসি পার্টি (Nazi Party)। তার বক্তৃতা ছিল আগুনঝরা—তিনি বলতেন, “ইহুদিরা হচ্ছে জাতির শত্রু”, “তারা আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করছে”, “জার্মান রক্তকে কলুষিত করছে।”

এইসব বক্তব্যে গরিব, বেকার, রাগান্বিত জনগণ হিটলারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এবং ১৯৩৩ সালে তিনি হয়ে যান জার্মানির চ্যান্সেলর।

পরিকল্পিত গণহত্যা—“ফাইনাল সল্যুশন”

হিটলার বিশ্বাস করতেন, জার্মান জাতি হচ্ছে “শ্রেষ্ঠ জাতি” (Aryan Race), আর ইহুদিরা সেই জাতির জন্য “বিপদ”। তাই শুরু হয় এক নির্মম পরিকল্পনা—
“The Final Solution”—ইহুদিদের সম্পূর্ণভাবে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা।

  • ইহুদিদের প্রথমে চিন্হিত করা হয়।
  • পরে তাদের গেটোর ভেতরে রাখা হয়।
  • এরপর শুরু হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো—যেখানে চলত অত্যাচার, না খেয়ে মারা যাওয়া, গ্যাস চেম্বারে শ্বাসরোধ করে হত্যা।

Auschwitz, Dachau, Treblinka—এইসব নাম হয়ে ওঠে মৃত্যুর কারখানা।

শুধু ইহুদিই নয়…

হিটলারের ঘৃণার শিকার হয়েছিল আরও বহু গোষ্ঠী—যেমন:

  • রোমা (জিপসি)
  • প্রতিবন্ধী মানুষ
  • সমকামী ব্যক্তি
  • রাজনৈতিক বিরোধীরা

সবাইকেই একইভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পৃথিবী যখন বুঝে ফেলে সত্য

যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৫ সালে। নাৎসি বাহিনীর পতন ঘটে, এবং হিটলার আত্মহত্যা করেন তার বাংকারে। যখন মিত্রবাহিনী ক্যাম্পগুলোতে প্রবেশ করে, তখন তারা দেখতে পায়—

  • লক্ষ লক্ষ মৃতদেহ
  • হাড়সর্বস্ব মানুষ
  • গ্যাস চেম্বার ও পোড়ার চুল্লি

বিশ্ব তখন বোঝে, এই ইতিহাস কল্পনা নয়—এ বাস্তবতা, যা মানবতা বিশ্বাস করতে চায় না।

উপসংহার

হিটলার কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না—তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক উন্মাদ আইডিওলজির প্রতীক। একটি গোটা জাতিকে ঘৃণার বশবর্তী করে কিভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড ঘটানো যায়—তা সে দেখিয়ে দিয়েছে।

এই গল্প আমাদের শুধু ইতিহাস শেখায় না, বরং সতর্ক করে—
যেখানে ঘৃণা জন্ম নেয়, সেখানেই জন্ম নেয় ধ্বংস।

Cute Bangla 24

View all posts

Add comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Cute Bangla 24

Latest videos