কুকুরকে বলা হয় মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। কিন্তু এমন একটি কুকুর ছিল, যাকে বিশ্ব প্রথম পাঠিয়েছিল মহাশূন্যে—বিনিময়ে তার জন্য কোনো ফেরার পথ ছিল না। তার নাম ছিল লাইকা। এই নিরীহ প্রাণীটি ছিল ইতিহাসের প্রথম জীবন্ত প্রানী, যে পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল মহাশূন্যে। কিন্তু এর পেছনে ছিল এক হৃদয়বিদারক কাহিনি, যা আজও কোটি কোটি মানুষকে কাঁদায়।

কে ছিল লাইকা?

লাইকা ছিল একটি রাস্তার কুকুর। ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কো শহরের পথ থেকে তাকে তুলে আনা হয়। কারণ সে ছিল শান্ত স্বভাবের, ধৈর্যশীল এবং ছোট গড়নের—যা মহাকাশ অভিযানের জন্য উপযুক্ত মনে করেছিল সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা। তারা তাকে মহাকাশযান স্পুটনিক ২-এ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

একটি আত্মহীন মিশন

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর, স্পুটনিক ২ উৎক্ষেপণ করা হয় লাইকাকে নিয়ে। বিশ্বজুড়ে তখন এক আবেগঘন উন্মাদনা। পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানোর পর লাইকা হয়ে ওঠে প্রথম জীবন্ত প্রাণী, যাকে মহাশূন্যে পাঠানো হলো। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন এ ঘটনাকে বিজ্ঞানের জয়গান হিসেবে প্রচার করে।

কিন্তু বাস্তবতা ছিল অনেক বেশি নির্মম।

সেই সময়ে স্পুটনিক ২–তে লাইকার ফিরে আসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে মহাকাশে গিয়ে বেঁচে থাকার জন্য খাবার পেয়েছিল, কিন্তু বেঁচে ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, উৎক্ষেপণের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অতিরিক্ত তাপ ও চাপের কারণে লাইকার মৃত্যু হয়।

কেন এই মিশন?

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন চাচ্ছিল দেখাতে যে, মানুষ পাঠানোর আগে জীবিত প্রাণী পাঠিয়ে মহাশূন্যে টিকে থাকা সম্ভব কি না। লাইকার জীবন দিয়ে সেই পরীক্ষা সফল হয়েছিল। কিন্তু সেই সফলতার মূল্য ছিল এক নিরীহ প্রাণীর জীবন। লাইকা স্বপ্ন দেখেনি, সে কেবল মানুষকে বিশ্বাস করেছিল।

মৃত্যু এবং পরবর্তী বোধোদয়

বহু বছর পর, ২০০২ সালে এক সোভিয়েত বিজ্ঞানী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন যে, লাইকা উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। এই স্বীকারোক্তি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। অনেক প্রাণীপ্রেমী সংগঠন তখন বলেছিল—লাইকাকে ব্যবহার করা হয়েছিল এক নিষ্ঠুর পরীক্ষায়, যেটা কোনো প্রাণীর সঙ্গে করা উচিত হয়নি।

২০০৮ সালে, লাইকার সম্মানে মস্কোতে একটি ছোট স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। যেখানে সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মহাকাশযানের পাশে। এটি শুধু তার প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং আমাদের বিবেকেরও প্রতিফলন।

উপসংহার

লাইকা ছিল না কোনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র। সে ছিল একটি জীবন্ত প্রাণী—ভয় পেত, অনুভব করত, ভালোবাসত। তাকে ব্যবহার করে আমরা হয়তো মহাকাশ বিজ্ঞানের অনেকটা এগিয়ে গেছি, কিন্তু সে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে—প্রযুক্তির উন্নতির পেছনে থাকা মানবিক মূল্য কতটা গভীর।

লাইকার গল্পটি আমাদের চোখে শুধু জল আনে না, বরং আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করে—বিজ্ঞানের অগ্রগতি কি কখনো করুণা ও ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হতে পারে?

Cute Bangla 24

View all posts

Add comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Cute Bangla 24

Latest videos