মহাকাশের আজব জীবনযাত্রা
প্রতিদিন আমরা পৃথিবীতে ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি—খাওয়া, গোসল, অফিস, আবার ফিরে ঘুম। কিন্তু কল্পনা করুন, যদি এই সাধারণ রুটিনটা হঠাৎ বদলে যায়, আর আপনাকে থাকতে হয় পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশে! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন—আজ আমরা জানবো মহাকাশচারীদের সেই আজব, অথচ চমকপ্রদ জীবনযাত্রা সম্পর্কে।
১. ভাসমান জীবন!
মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই প্রতিটি পদক্ষেপেই শরীর ভেসে থাকে। বিছানা নেই, চেয়ার নেই—সবকিছুই আটকে রাখতে হয় বেল্ট বা স্ট্র্যাপ দিয়ে। ঘুমাতে গেলেও মহাকাশচারীরা ব্যাগের মতো স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে শরীরটাকে দেয়ালের সাথে আটকে ঘুমান। না হলে সোজা ভেসে বেড়াবেন পুরো স্পেস স্টেশনজুড়ে!
২. খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কড়াকড়ি
মহাকাশে রান্না করা যায় না। তাই আগে থেকেই প্রস্তুত করা শুকনো খাবার বা ফ্রিজড মেনু খেতে হয়। পানি দিয়ে গুঁড়ো খাবার মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন পদ, যেমনঃ স্পেস পাস্তা বা স্পেস চিড়া! মজার ব্যাপার হলো, খাবার মুখে নিলেই তা উড়ে যেতে পারে, তাই খাওয়ার সময়ে মুখ চেপে ধরতে হয়!
৩. বাথরুমও বিজ্ঞানের খেলা
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, মহাকাশে টয়লেট ব্যবস্থাও একেবারে ভিন্ন। এখানে প্রস্রাব বা মল ত্যাগ করতে হয় এক বিশেষ ভ্যাকুয়াম টয়লেটে, যা মলকে শুষে নিয়ে সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করে। আর প্রস্রাব? সেটাকে পরিশোধন করে আবার পানির মতো করে ব্যবহার করা হয়! হ্যাঁ, পুনর্ব্যবহারই একমাত্র উপায়।
৪. শরীরচর্চা বাধ্যতামূলক
ভেসে থাকার কারণে শরীরের হাড় ও পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২ ঘণ্টা শরীরচর্চা করতে হয়। স্পেস স্টেশনে বিশেষ এক্সারসাইজ মেশিন আছে, যেগুলো মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতিতেও শরীরকে সক্রিয় রাখে।
৫. কাজ আর গবেষণায় কাটে দিন
মহাকাশচারীরা মূলত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যন্ত্রপাতির পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন আবিষ্কারের পেছনে কাজ করেন। তাদের প্রতিটি মুহূর্তই পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে। তবে মাঝে মাঝে পৃথিবীর ছবি তুলা বা ভিডিও কল করার সুযোগও থাকে!
শেষ কথা
মহাকাশে জীবন যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি চ্যালেঞ্জে ভরা। একেবারে নিয়মে বাঁধা, কৃত্রিম পরিবেশে টিকে থাকার যুদ্ধ যেন প্রতিদিনের বাস্তবতা। তাই যারা ভাবেন মহাকাশচারীরা শুধু ঘুরে বেড়ান, তারা ভুল ভাবছেন। মহাকাশের জীবন এক নিরব লড়াই, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তেই লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের বিস্ময়!
Add comment